.তোমার ঘরে বাস করে মন কয়জনা।
সম্পর্ক এর মতো জটিল অঙ্ক আর বুঝি নেই। জীবনের এই নদীতে সম্পর্কের জোয়ার-ভাঁটা খেলে চলে আশ্চর্য ভাবে। কখনো এই সম্পর্ক মানুষকে শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়াতে শেখায় কখনো বা কোমর ভেঙে দেয়। এই সকল সম্পর্কের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন সমীকরণ হলো নারী-পুরুষের সম্পর্ক। এক্ষেত্রে নারী হন স্বাভাবিক নির্ধারক। নারীই নির্ধারণ করেন তার মনে কোন পুরুষের প্রবেশাধিকার আছে.। পুরুষ চাইলেই নারীমন জয় করতে পারে না । পুরুষের প্রতি নারীর সাহচর্য,ভালোবাসা,প্রেম ,অপেক্ষা সবই খুব সুনিপুন ভাবে একজন পুরুষ কে নারী পর্যবেক্ষন করে তবেই বিচার করেন।
নারী দৃঢ় , আর পুরুষ গাম্ভীর্য প্রদর্শন করে । পুরুষ যত আস্ফালনই করুক না কেন, অবশেষে দৃঢ়চেতা নারীর কাছে হার মানতেই হয়। জল নরম কিন্তু কঠিন পাথরকেও ফাটিয়ে দেয় তার অবিরাম ধারা। নারীর দৃঢ়চেতা মনোভাবই তাঁর শক্তি। সহ্য ক্ষমতা তাঁর অস্ত্র। তাই এই পুরুষ শাসিত সমাজে নারী বাইরে কিছুটা পরাধীন হলেও- অন্তরে সে স্বাধীন। পুরুষ যত বজ্রগম্ভীরই হোক না সারাজীবন নারীর শাসনে(সাহচর্যে) থাকতে চায় । মা-এর শাসন শেষ হলে শুরু হয় প্রেমিকার শাসন। নারীর শাসন ছাড়া পুরুষের জীবন উশৃঙ্খল , অবাধ্য । তাই পুরুষের কাছে নারী হলো তার বুকের পাঁজরের হাড় (সুরক্ষা প্রাচীর)। পাঁজরের হাড়ের বক্রতা সহজাত , এগুলি সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টি করেছেন আমাদের হৃদপিন্ড কে সুরক্ষা দেবার জন্য। একে ঋজু করতে ভাবনাতীত , ভেঙে গেলে পুরুষের হৃদয় অরক্ষিত হয়ে যায়। পুরুষ হৃদয় সুরক্ষিত থাকে তাঁর কাছে, আগলে রাখে সে।
ইতিহাস সাক্ষী প্রথমে ছিল মাতৃতান্ত্রিক সমাজ। মাতৃতান্ত্রিক সমাজে পুরুষের গুরুত্ব তেমন ছিল না। মাতৃতান্ত্রিক সমাজ বলতে বোঝায় যেখানে পরিবারের দায়িত্ব থাকে একজন নারীর উপর এবং বংশের ধারাও নির্ধারিত হয় নারীর দিক থেকে৷ মোটের উপর সম্পদের দায়িত্বও মা থেকে মেয়ের উপর বর্তায় এবং বিয়ের পর পুরুষ নারীর ঘরে চলে যান৷ তবে রাজনৈতিক এবং সামাজিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব থাকে পুরুষের কাঁধে৷ আর তারা এটাকে বিবেচনা করে ক্ষমতার সুষম বণ্টন হিসেবে। তবে সময়ের সাথে সাথে মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায়ও পরিবর্তন আসলো ৷ জীবনধারণের অন্যান্য সুযোগের চাপ ছাড়াও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের পুরুষদের বাঁধার মুখে মাতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থা গুরুত্ব হারালো বলে মনে করেন ইতিহাসবিদরা ৷এলো ৷পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা। শুরু হলো যৌনশাসন। পুরুষশাসিত সমাজে পুরুষরা আবিষ্কার করল পুরুষ সর্বেসর্বা ও নারী দাসী । পুরষতন্ত্র থেকে উদ্ভূত হলো পুরুষশাসিত ধর্ম, রাষ্ট্র, বিজ্ঞান। পুরুষ পেলো সাাাজিক ও রাজনীতিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা। পুরুষ হয়ে উঠলো সমাজসংস্থাগুলোর নিয়ন্ত্রক, নির্ধারক । পুরুষ শাসিত ক্ষমতায় সমাজ গেলো বদলে ।
একজন নারী পুরুষের কাছে শুধুই যৌনতৃপ্তি কখনোই চায় না । নারী চায় পুরুষের প্রেম, সাহচর্য । মৈথুন, নারীর কাছে পুরুষের মতো একান্ত প্রয়োজনীয় নয়। নারী প্রেমের জন্য অপেক্ষা করে আর পুরুষ অপেক্ষা করে কামের জন্য। কামার্থ পুরুষ ব্যর্থ হয় নারীকে তাঁর মতো করে "প্রেমজ্ঞাপনে"। শুরু হয় এক আশ্চর্য Conflict. এর শাস্তি পায় "সম্পর্ক" । প্রেমের অভাবে নারী রূঢ় হয়ে উঠে। পুরুষ নারীর রৌদ্রমূর্তির তাৎপর্য বোঝে না এবং এর সঙ্গে মানিয়েও চলতে পারে না। নারীর রূঢ়তায় পুরুষ দিশাহারা হয়ে যায়। তার জীবন থেকে আনন্দ বিদায় নেয়। দেখতে দেখতে উভয়েই যৌবনের সায়াহ্নে পৌঁছে যায়-আসে বার্দ্ধক্য। শারীরিক ও মানসিক ভাবে উভয়েই দূ্র্বল হয়ে যায়। সবথেকে পুরোনো বন্ধু বলে, একে অপরকে মেনে নেয় তাদের উভয়ের নিরাপত্তার তাগিদে, আর হতাশা ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে যন্ত্রণা ভরা অতীত।ধরে থাকে একে ওপরের হাত।